হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ২- মহান আল্লাহতালা পবিত্র কোআনের সূরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
'...اَلْیوْمَ أَکمَلْتُ لَکمْ دینَکمْ وَ أَتْمَمْتُ عَلَیکُمْ نِعْمَتی وَ رَضیتُ لَکُمُ الْإِسْلامَ دیناً...'
"আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করলাম এবং আমার নেয়ামতসমূহকে তোমাদের জন্য পরপূর্ণতা দান করলাম!" এই আয়াতির ঈঙ্গিত এরুপ যে, এই নেয়ামত ইসলামের নেয়ামত, হেদায়াতের নেয়ামত, মানবজাতিকে সিরাতুল মুস্তাকীম প্রদর্শনের নেয়ামত- এসব নেয়ামত তখনই পরিপুর্ণ হতো, যখন রাসুল (সাঃ) এর ওফাতের পর মানবজাতির পথ নির্দেশকের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হত।
আমিরুল মু'মিনিন আলী (আঃ)'কে রাসুল (সাঃ) এর পর ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং রাসুল (সাঃ) এর পর রাজনীতি, শাসন ব্যবস্থা ও ইমামত এবং মুসলিম উম্মাহর পথপ্রদর্শকের বিষয়ে অন্তর্ভুক্তি হওয়া, এই দু'টি বিষয় প্রকৃত বাস্তবতা, যা ঐতিহাসিক 'গাদীর' এর ঘটনার মধ্যে রয়েছে।
গাদীর, বেলায়েত ও ইমামত- এই তিনটি মূল বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা শিয়া মাযহাবের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। যুক্তি-তর্কের অন্যান্য বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ের মত এই তিনটি বিষয়ে মুসলমানদের মধ্যে কোনো প্রকার বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি করা উচিৎ নয়।
প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের মুসলমানগণ এই 'গাদীর' নামক ঘটনার মাধ্যমেই সারা বিশ্বের মুসলমানদের পরিপূর্ণ ও যথেষ্ঠ হেদায়াত ও বিকাশের জন্য সেতু-বন্ধন তৈরি করতে পারে; অর্থাৎ গাদীরের সঠিক উপলব্ধিই তাদের সঠিক পথ প্রাপ্তির মাধ্যম হতে পারে৷ আজ পর্যন্ত কেউই গাদীরে খূম এর এই ঘটনা ও রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর সেই মহান বাণীকে অস্বীকার করেনি।
ইসলামের ইতিহাস ও ইসলামের প্রাথমিক যুগের ঘটনা-পরিক্রমের দৃষ্টিতে 'গাদীর' এমনই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যে, যদি এই বিষয়ের প্রকৃত তাৎপর্য মোতাবেক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা যেত, তাহলে আজ মানবজাতির অবস্থা আমূল পরিবর্তিত হত৷
' গাদীর' বিষয়টি ঐ সকল বিষয়াবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট, যেসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার মাধ্যমে ইসলামী সমাজের, বিশেষত আমাদের দেশ ও জাতির জন্য সঠিক পথে চলার ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনে।
' গাদীর' এমন একটি বিষয় যা মানদন্ড, পরিমাপ ও সূচক সৃষ্টি করে দেয়৷ সারা বিশ্বের মানুষ এই গাদীরকে নিজেদের অনুকরণীয় হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে এবং মুসলিম উম্মাহর চলার পথের করণীয় নির্ধারণ করতে পারে৷
শিয়াদের তথা আহলে বাইতের অনুসারীদের বেলায়েতের জন্য গর্বিত হওয়া উচিৎ এবং অন্যান্যদেরও বেলায়েত সম্পর্কে জ্ঞান অন্বেষণ করা উচিৎ।
আমরা যদি 'ঐক্যের' কথা বলে থাকি, তাহলে বেলায়েত ও গাদীরের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ, প্রগতিশীল, প্রকৃত এবং ইসলামের পরিত্রাণমূলক বিষয়টিকে ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়৷ গাদীরের বিষয়টি মোটেও ভুলে যাওয়া চলবে না।
যারা ইসলামকে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে আলাদা করতে এবং মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়বস্তুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখতে চেয়েছে; বস্তুত তারা সেক্যুলারিজমের দৃষ্টিতে ইসলামকে দেখতে চেয়েছে, তাদের এই মতবাদ ও আকাঙ্খার প্রকৃত জবাব হল এই 'গাদীর'! সমাপ্ত
(অনুবাদঃ নাজমুল হক)